মহাশূন্যে পর্যটন
মহাশূন্যে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে হয়তো অনেকের আছে৷ কিন্তু সেজন্য প্রয়োজন অনেক টাকার৷ তবে এ ধরণের আগ্রহী পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ ফলে মহাশূন্য ভ্রমণ, বাণিজ্যিকভাবে একটি লাভবান খাত হয়ে উঠছে৷
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার উপর ওঠা৷ সেখান থেকে পৃথিবী দর্শন৷ সঙ্গে, অসাধারণ কিছু অভিজ্ঞতা৷ পর্যটকদের এই ইচ্ছা পূরণের জন্য কয়েকটি কোম্পানি বাহন তৈরির কাজ করছে৷ এর মধ্যে একটি ভার্জিন গ্যালাকটিক৷ ব্রিটিশ বিলিওনেয়ার রিচার্ড ব্র্যানসন’এর ভার্জিন গ্রুপের একটি কোম্পানি এটি৷ তারা ‘স্পেসশিপটু' নামের একটি যান তৈরি করছে৷ এ বছরের মধ্যেই সেটা পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এরপর আগামী বছর থেকে পর্যটকদের মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে ভার্জিন গ্যালাকটিক৷ মহাশূন্যে যাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে প্রায় ৫০০ জন আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি৷ একেক জন পর্যটককে এজন্য খরচ করতে হবে দুই লক্ষ ডলার৷ বাংলাদেশি টাকায় যেটা প্রায় এক কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা৷ স্পেসশিপটু চালাবেন দুজন পাইলট৷ আর তাতে একসঙ্গে ছয়জন পর্যটককে মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়া যাবে৷
ভার্জিন গ্যালাকটিক ছাড়াও জেকোর অ্যারোস্পেস নামের আরেকটি কোম্পানি ‘লিঙ্ক্স' নামের একটি দুই আসনের রকেট বানানোর জন্য অর্থ জোগাড় করে ফেলেছে৷ এই রকেটে করে অবশ্য অনেক কম টাকায় মহাশূন্য যাওয়া যাবে৷ বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা৷
ভার্জিন গ্যালাকটিকের দেয়া তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে মহাশূন্যে শুধু ঘুরতে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ আগে যেখানে শুধু বিজ্ঞানীরা যেতেন এখন সেখানে সাধারণ মানুষও যেতে চাইছেন৷ বিজ্ঞানীদের বাইরে এখন পর্যন্ত সাতজন পর্যটকের কথা আমরা জানি যারা নিজের টাকা খরচ করে শুধু ঘুরতেই মহাকাশে গেছেন৷ এর মধ্যে একজন আবার দুইবার এই অভিজ্ঞতা নিয়েছেন৷
মহাশূন্যের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে জরিপ করছে টাউরি গ্রুপ৷ এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কারিসা ক্রিসটেনসেন বলছেন, এখন পর্যন্ত যে ধরণের তথ্য এসেছে তা বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক৷ জরিপ প্রতিবেদনটি মে মাসে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে৷
রাশিয়ার মির স্টেশন যখন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তখনই অনেকে সেখানে যেতে চেয়েছিলেন৷ এছাড়া এই সুযোগকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ যেমন টেলিভিশনে একটি রিয়েলিটি শো'র প্রযোজক মার্ক বার্নেট চেয়েছিলেন, তাঁর প্রতিযোগিতার বিজয়ীকে মির স্টেশনে পাঠাতে৷ এদিকে ভার্জিন গ্যালাকটিক বলছে তারা ‘সেক্স ইন স্পেস' নামের একটি ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে৷মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা তাদের গবেষণার জন্য সাবঅর্বিটাল ফ্লাইট পরিচালনা করতে সাতটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে - যার পরিমাণ প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার৷ এর মধ্যে একটি কোম্পানি হচ্ছে আর্মাডিলো অ্যারোস্পেস৷ নাসার এই সিদ্ধান্ত মহাকাশ নিয়ে বাণিজ্য শুরুর যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাকে এগিয়ে নেবে বলে মনে করেন আর্মাডিলোর এক কর্মকর্তা৷
তবে মহাশূন্যকে ঘিরে নতুন এই সম্ভাবনার ব্যাপারে সবাই একমত নন৷ যেমন জন পাইক৷ ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘গ্লোবালসিকিউরিটি ডট অর্গ' এর পরিচালক তিনি৷ একসময় মহাশূন্যের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী ছিলেন তিনি৷ কিন্তু এখন বলছেন, মহাকাশ ব্যবসা হচ্ছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা৷ কেননা গত পঞ্চাশ বছরে এ খাতে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি৷ তবে সাবেক নাসা কর্মকর্তা ও এখন দু'দুটি মহাকাশভিত্তিক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী অ্যালান স্টার্ন বলছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মহাশূন্যে পর্যটন বিষয়টি দাঁড়িয়ে যেতে পারবে৷ তিনি বলছেন এখনো মহাকাশে যাতায়াত বিষয়টি অনেক খরচের ব্যাপার৷ তাই অনেক দেশ চাইলেও এ নিয়ে গবেষণা করতে পারছে না৷ তবে ধীরে ধীরে এই খরচ কমে আসছে৷ কেননা বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ছে৷ এর ফলে এখন থেকে অন্যান্য দেশও মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করতে এবং সেখানে বিজ্ঞানী পাঠাতে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে মনে করেন স্টার্ন
আরও দেখুন...